Thursday, October 6, 2016

কাপাসিয়ার একজন কৃতি সন্তান মরহুম এডভোকেট চৌধুরী মোঃ সাদির মোক্তার

    
এডভোকেট চৌধুরী মোঃ সাদির  ১লা অক্টোবর ১৯১৬ সালে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের মামরুদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম চৌধুরী মোহাম্মদ হাসান।যিনি সাদির মোক্তার নামেই সুপরিচিত ছিলেন।
তিনি ঢাকা থেকে মেট্রিক পাস করেন ১৯৩৯ সালে। এরপর ব্রিটিশ ভারতের কোলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম এ অবস্থিত হাইকোর্ট এর অধীনে মোক্তারি পাস করেন ১৯৪২ সালে। এরপর ঢাকা এসে আইন ব্যবসা শুরু করেন ব্রিটিশ শাসনের শেষ সময় ১৯৪৩ সালে। অল্প দিনেই আইন পেশায় সুনাম অর্জন করেন তিনি। পুরানো ঢাকার বংশাল মালিটোলায় তার চেম্বার স্থাপন করেন। যা প্রবীণ অনেকের স্মৃতিতে হয়তো এখনো আছে।
সুদীর্ঘ জীবন আইন পেশায় নিয়োজিত থাকার সময়ে ৬০ এর দশকে কয়েক বার তিনি ঢাকা মোক্তার বার কাউন্সিল এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যার নামকরন হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন এডভোকেটস বার এসোসিয়েশন।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে আজীবন আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ষাটের দশকে ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা সদর নর্থ সাব ডিভিশন (ঢাকা সদর উত্তর মহকুমা / বর্তমান গাজীপুর জেলা) আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
শুকনো বটপাতায় রঙ তুলিতে আকা বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি আমার বাবাকে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে। আর আমার বাবা দিয়েছিলেন আমাকে। যখন আমি প্রাইমারীর ছাত্র। পরম যত্ন আর ভালোবাসায় এখনো মাঝে মাঝে দেখি .--নাজমুল হাসান চৌধুরী পিন্টু

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ এর প্রস্তাবকারী ছিলেন জনাব চৌধুরী মোহাম্মদ সাদির মোক্তার এবং সমর্থনকারী ছিলেন জনাব হেকিম মোল্লা। জানা যায় জনাব সাদির মোক্তার বিভিন্ন জনসভায় বঙ্গতাজকে পরিচয় করিয়ে দিতেন । তারা সহ সকল কাপাসিয়া কালিগঞ্জ বাসীর প্রচেষ্টায় বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ এম এন এ নির্বাচিত হন।
সেই সময় এই সুবিশাল এলাকার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল পায়ে হাটা !! উনি জনগণের এই কষ্ট অনুধাবন করে এই পশ্চাৎপদ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি কল্পে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত ' শীতলক্ষ্যা ন্যাভিগেশন লঞ্চ কোম্পানি'। যার বহরে ছিল পান্না, বাবলা, ফাদিয়া, সান লাইট, চৌধুরী, নাজির, জলপিপি ইত্যাদি লঞ্চ সমূহ।
যেগুলি নারায়ণগঞ্জ থেকে তারাব, রুপগঞ্জ, কালিগঞ্জ, ঘোড়াশাল, পলাশ, চরসিন্দুর ইত্যাদি এলাকা হয়ে কাপাসিয়া, টোক, বর্মী ও হাতিরদিয়া পর্যন্ত চলাচল করত।
সে সময় রাস্তা ঘাট বিহীন এই বিশাল এলাকার জনগণের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই লঞ্চগুলো। অনুন্নত বিশাল এই এলাকার শিক্ষা বিস্তারের জন্য ছাত্র ছাত্রীদের বিনা ভাড়ায় স্কুল কলেজে যাতায়াতের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি।
সমাজসেবক হিসাবেও যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন তিনি। জনাব চৌধুরী মোঃ সাদির ১৯৬৫ সালে তৎ
কালীন কাপাসিয়া থানা এসোসিয়েশনের উদ্যোগে কাপাসিয়ার প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ সর্বজনাব বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রী ফকির আব্দুল মান্নান, ডাঃ সানাউল্লাহ, চেয়ারম্যান সফিউদ্দিন আহমদ, অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন, রশিদ মিয়া, সামাদ মিয়া, মমতাজ খান ও আরও অনেকের সাথে একান্ত ভাবে থেকে বর্তমান 'কাপাসিয়া ডিগ্রী কলেজ' প্রতিষ্ঠা করেন।
জানা যায় যে সকলের অনুরোধে জনাব চৌধুরী মোহাম্মদ সাদির মোক্তার সাহেব তৎ
কালীন পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটা বড় অংকের টাকা ডিপোজিট রাখেন এবং মাসের শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য খরচের টাকার করপোরেট গ্যারান্টি দেন তার প্রতিষ্ঠান 'শীতলক্ষ্যা ন্যাভিগেশন' থেকে । এর ফলেই 'কাপাসিয়া ডিগ্রী কলেজ' বাস্তব আলোর মুখ দেখে।
পাকিস্তান এর শেষ দিকে ১৯৭০ সালে নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য সনমানিয়া ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা করেন তার মায়ের নামে 'আখতার বানু গার্লস হাই স্কুল'। যা বর্তমানে কাপাসিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ 'আখতার বানু হাই স্কুল' নামে সুপরিচিত।
তিনি জনগণের যোগাযোগ উন্নতির লক্ষে এলাকায় তার পিতার নামে 'হাসানপুর পোষ্ট অফিস' প্রতিষ্ঠা করেন।
এছাড়াও তিনি বহু স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ইত্যাদিতে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করেছেন ও জন কল্যাণ মূলক বহু কাজ করে গেছেন।
১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি
সন্তানাদিঃ উনি ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক ছিলেন ।উনার দুই মেয়ে মারা গেছেন বর্তমানে ১ মেয়ে ও ৩ ছেলে জীবিত আছেন।
ছেলে-মেয়েদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
১) মরহুম ফওজিয়া সুলতানা চৌধুরী বেবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স।
মিরপুর কলেজ এর প্রফেসর থাকা অবস্থায় মারা যান। স্বামী উচ্চ পদস্থ ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। একমাত্র ছেলে ফয়সাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে অষ্ট্রেলিয়ায় পি এইচ ডি করছেন।

২) মরহুম ফাদিয়া সুলতানা চৌধুরী ফাদিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স
জেলা অতিরিক্ত জাজ অবস্থায় মারা যান। স্বামী অ্যাডভোকেট ,জাতীয় পার্টির নেতা। উনার ২ মেয়ে

৩) নাজমুল হাসান চৌধুরী পিন্টু    
স্কুলঃ ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, ঢাকা
কলেজ ঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা  
বিশ্ববিদ্যালয় ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স
ব্যাবসায়ী, চেয়ারম্যান, ফোমেক্স গ্রুপ, ঢাকা

*জগন্নাথ কলেজে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন।
*কাপাসিয়ায় ১৯৮৩ সাল থেকে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে যুক্ত । শ্রদ্ধেয় নেতা খালেদ খুররম ও হজরত আলী মাস্টারের নির্দেশে ছাত্রলীগের কর্মীত্ব চুকিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী হন ।
১৯৮৪ সালের ২২ শে এপ্রিল আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ সংগ্রহ করেন ।
*প্রথমে কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটির সদস্য পরে   দিন কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ 


*বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
 *সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ম্যাট্রেস ম্যানুফেকচারারস এন্ড এক্সপোরটারস এসোসিয়েশন
*সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ ফোম ম্যানুফেকচারারস এন্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন  
*উপদেষ্টা, বাংলাদেশ অ্যাডেসিভ ম্যানুফেকচারারস এসোসিয়েশন  
*উপদেষ্টা, ৭১ নং ওয়ার্ড পাঞ্চায়েত কমিটি, বংশাল থানা, ঢাকা সাউথ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা
*উপদেষ্টা, সি এম সাদির সৃতি গ্রন্থাগার, আড়াল বাজার, সন্মানিয়া ইউনিয়ন, কাপাসিয়া , গাজীপুর।
 *চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং কমিটি, আখতার বানু হাই স্কুল, সন্মানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর
* সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশন, ঢাকা
*সাবেক সদস্য, গভর্নিং বডি, কাপাসিয়া ডিগ্রী কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর
*সাবেক যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ঔনার্স আসোসিয়েশন, ঢাকা
*২০১৩ সালের সংসদ উপ নির্বাচন ও ২০১৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর ৪ কাপাসিয়া আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী ছিলেন।
*বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত
৪) ফারজানা চৌধুরী মিতু, অনার্স মাস্টার্স, প্রফেসর, কালীগঞ্জ মহিলা কলেজ, গাজীপুর
৫) জহিরুল হাসান চৌধুরী মাসুম, ব্যাবস্যায়ী, ডিরেক্টর, ফোমেক্স গ্রুপ, ঢাকা
৬) জিয়াউল হাসান চৌধুরী সজীব, অনার্স মাস্টার্স, ব্যবসায়ী, ডিরেক্টর, ফোমেক্স গ্রুপ, ঢাকা

স্বাধীনতার পরে তিনি ও তার একমাত্র বড় ভাই কাপাসিয়ার সন্মানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল কাদির চৌধুরী বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হয়ে আসুস্থ হয়ে পরেন এবং পরবর্তীতে উভয়েই কাছাকাছি সময়ে ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৯৭৭ সালের ২৭ শে জুলাই ৬১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ২৭ শে জুলাই ছিল মরহুম এডভোকেট চৌধুরী মোহাম্মদ সাদির সাহেবের ৩৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী।


No comments:
Write comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.